ওয়াদা ভঙ্গ হলে করনীয়

ওয়াদা ভঙ্গ হলে করনীয়

ওয়াদা ভঙ্গ হলে করনীয়

‘ওয়াদা’ শব্দের অর্থ- অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি দেয়া। ইসলামী পরিভাষায়, কাউকে কোনো কিছুর প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর তা পূর্ণ না করাকে ‘ওয়াদা ভঙ্গ’ বলে।

*ওয়াদা ভঙ্গ করা হারাম ও কবীরাহ গুনাহ। এটি মারাত্মক একটি বদ-আখলাক ও রূহানী

রোগ। কারো মাঝে এ রোগটি থাকলে ভালো কোনো রূহানী ডাক্তার তথা আল্লাহওয়ালা আলিম বা শায়খের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিয়ে তা দূর করা জরুরী।

ওয়াদা ভঙ্গকারী নিজেকে বুযুর্গ বলে দাবী করলেও সে কখনো বুযুর্গ হতে পারবে না। এমনকি তার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ঈমান ও দ্বীনদারী পর্যন্ত থাকে না।

এ মর্মে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ‘অর্থাৎ, যার ওয়াদা ঠিক নেই, তার মধ্যে দ্বীন নেই। (আহমাদ-১২৩৮২, রায়হাকী-১৯৩২৪)

 

ওয়াদা ভঙ্গ হলে করনীয়

পবিত্র কুরআনেও ওয়াদা পূর্ণ করার কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং সাথে

সাথে একথাও বলা হয়েছে যে, কিয়ামত দিবসে প্রত্যেক মানুষকেই ‘ওয়াদা’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। যেমন- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولًا

 

তোমরা ওয়াদা’ পূর্ণ করো, নিশ্চয়ই কিয়ামত দিবসে ওয়াদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সূরা বানী ইসরাইল-৩৪)

আজকাল অনেক নামী-দামী ও বুযুর্গশ্রেণীর লোকদের থেকেও ‘ওয়াদা’ খিলাফ (ভঙ্গ) হতে

দেখা যায়। অথচ পবিত্র কুরাআনে বার বার বলা হয়েছে যে,

 

‘ওয়াদা ভঙ্গকারীকে আল্লাহ কখনোই পছন্দ করেন না।’ আর আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন না সে কি কখনো আল্লাহর ওলী হতে পারবে?

 

অনেকে শুধু টাকা-পয়সা যথাসময়ে আদান-প্রদানের প্রতিশ্রুতিকেই ‘ওয়াদা’ মনে করে, অন্য কিছুকে ‘ওয়াদা’ মনে করে না। কিন্তু একটি বিষয় স্মরণ রাখা দরকার যে,

 

‘ওয়াদা’ শুধু টাকা-পয়সা লেনদেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং যে কোনো বিষয়ে ‘ওয়াদা’ করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। এর কয়েকটি উদাহরণ

 

ওয়াদা ভঙ্গ করার শাস্তি

নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

০১. সময়ের ওয়াদা : যেমন- কেউ ওয়াদা করলো যে, আমি বিকাল ৫ টায় আপনার সাথে দেখা করবো। কিন্তু বিকাল ৫ টার সময়ে সে এলো না এবং

 

*শরয়ী ওজরে আসতে পারছি না’ এ মর্মে পূর্ব থেকে সে অবহিতও করলো না। এটা ‘ওয়াদা ভঙ্গ করা’র অন্তর্ভূক্ত । এরূপ করা সম্পূর্ণ হারাম ও কবীরাহ গুনাহ ।

 

০২. কাজের ওয়াদা : যেমন- কেউ ওয়াদা করলো যে, আমি ১০দিনের মধ্যে কাজটি করে দিবো। কিন্তু ১০দিনের মধ্যে সে কাজটি করলো না। এটাও ‘ওয়াদা ওয়াদা ভঙ্গের অন্তর্ভুক্ত।

 

ওয়াদা ভঙ্গ হলে করনীয়

এরূপ করা সম্পূর্ণ হারাম ও কবীরাহ গুনাহ। কিয়ামত দিবসে তাকে ‘ওয়াদা ভঙ্গের’ শাস্তি প্রদান করা হবে।

০৩. লেনদেনের ওয়াদা : যেমন- কেউ ওয়াদা করলো যে, ৫ তারিখে আপনার পাওনা পরিশোধ করবো।

 

কিন্তু ৫ তারিখে তো দিলোই না এবং ‘শরয়ী ওজরে দিতে পারছি না’ এ মর্মে পূর্ব থেকে সে অবহিতও করলো না।

 

এটাও ‘ওয়াদা ভঙ্গের অন্তর্ভূক্ত।’ কিয়ামত দিবসে এরূপ ওয়াদা ভঙ্গকারীকে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে।

 

০৪. স্থানের ওয়াদা : যেমন- কেউ ওয়াদা করলো যে, আমি অমুক সময়, অমুক স্থানে আপনার সাথে দেখা করবো। কিন্তু যথাসময়ে সেস্থানে উপস্থিত হলো না।

এটাও ‘ওয়াদা ভঙ্গের অন্তর্ভূক্ত।’ এরূপ করার দ্বারা ওয়াদা ভঙ্গের গুনাহ হবে এবং কিয়ামত দিবসে কঠিন শাস্তি ভোগ করবে।

 

০৫. দায়িত্ব পালনের ওয়াদা : যেমন- কেউ ওয়াদা করলো যে, আমি আন্তরিকতার সাথে এবং যথাযথভাবে এই দায়িত্ব পালনের ‘অঙ্গীকার’ করছি

 

(সাধারণত সংগঠনের দায়িত্বশীলগণকে এভাবেই শপথবাক্য পাঠ করানো হয়ে থাকে)। কিন্তু দেখা গেলো যে, সে আন্তরিকতার সাথে সংগঠনের কাজ করছে

 

না; বরং প্রতিটি কাজেই যথেষ্ট ত্রুটি ও অবহেলা করছে। এটা চরম ‘ওয়াদা ভঙ্গের অন্তর্ভূক্ত।’ এরূপ ‘ওয়াদা ভঙ্গকারীদের জন্যে জান্নাত হারাম।

 

ওয়াদা ভঙ্গকারী কে কি বলে

এমনকি সহীহ বুখারীর ৭১৫০ নম্বর হাদীসে বলা হয়েছে- বা ‘অর্থাৎ সে জান্নাতের ঘ্রাণ পর্যন্ত পাবে না।’ ০৬. দ্বীনদারীর ওয়াদা : যেমন- কেউ ওয়াদা করলো যে,

 

আমি আজ থেকে মিথ্যা কথা বলবো না, গীবত করবো না, চুরি করবো না, সুদ-ঘুষ খাবো না, যিনা করবো না, মদ্য পান করবো না, আমানতের খিয়ানত করবো না, নামাজ কাযা

 

করবো না, রোযা ছাড়বো না ইত্যাদি। এই মর্মে ‘ওয়াদা’ করার পরেও যদি কেউ পুনরায় এরূপ পাপকর্মে লিপ্ত হয়, তাহলে তার ওয়াদা ভেঙ্গে যাবে

 

এবং খালিস দিলে তাওবাহ করে সেই কাজ বর্জন না করলে কিয়ামত দিবসে কঠিন শাস্তি ভোগ করবে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, যেকোনো বিষয়ের

*ওয়াদা’ করলে তা পালন করা জরুরী। ভঙ্গ করা হারাম ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।

 

তাই আসুন, যাদের মধ্যে ওয়াদা ভঙ্গের’ কু-অভ্যাস আছে, আমরা প্রত্যেকেই আজ থেকে পাক্কা ইরাদা করি-

ওয়াদা পালনের গুরুত্ব

০১. জীবনে আর কখনো ‘ওয়াদা ভঙ্গ’ করবো না।

০৩. ওয়াদা ভঙ্গকারীর সাথে সম্পর্ক রাখবো না।

০২. ওয়াদা ভঙ্গকারীকে অন্তর থেকে ভালোবাসবো না ।

০৪. ওয়াদা ভঙ্গকারীর সাথে আত্মীয়তা করবো না।

০৫. ওয়াদা ভঙ্গকারীর সাথে বন্ধুত্ব গড়বো না ।

০৬. ওয়াদা ভঙ্গ করাকে অন্তর থেকে ঘৃণা করবো।

০৭. ওয়াদা ভঙ্গের মাধ্যমে অতীতে মানুষের যেসব হক নষ্ট করেছি তা অবশ্যই ফেরৎ দিবো ।

০৮. ওয়াদা ভঙ্গের মাধ্যমে যাদের হক নষ্ট করেছি এবং যাদেরকে কষ্ট দিয়েছি তাদের কাছ থেকে অবশ্যই ক্ষমা চেয়ে নিবো।

০৯. অতীতের ভুলের জন্যে আল্লাহর কাছে তাওবাহ-কান্নাকাটি করবো।

১০. হক্কানী শায়খের চিকিৎসা অনুযায়ী এই কু-অভ্যাস দূর করার চেষ্টা করবো।

আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন

Check Also

মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা কি জায়েজ

মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা কি জায়েজ

মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা কি জায়েজ? কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা ইসলামে পিতা-মাতার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *