শান্ডা খাওয়ার উপকারিতা এবং শান্ডা খাওয়া হালাল নাকি হারাম
মরুভূমির শান্ডা খেলে কি উপকার হয়
মরুভূমির শান্ডা বলতে সাধারণত কাঁটালেজওয়ালা টিকটিকি বা ইউরোমাস্টিক্স প্রজাতির টিকটিকিদের বোঝানো হয়
যা প্রধানত উত্তর আফ্রিকা থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারত পর্যন্ত শুষ্ক ও আধা-শুষ্ক অঞ্চলে দেখা যায়।
এদের আরবিতে ‘দব’ বলা হয়। মরুভূমির পরিবেশে এরা বেশ ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে।
অনেকের বিশ্বাস, এই প্রাণীটির মাংস এবং তেল বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় সহায়ক
শান্ডা খাওয়ার উপকারিতা এবং শান্ডা খাওয়া হালাল নাকি হারাম
এবং এটি খেলে কিছু উপকার পাওয়া যায়। নিচে কয়েকটি সম্ভাব্য উপকারিতা আলোচনা করা হলো:
১. পুষ্টির উৎস: মরুভূমির স্থানীয় লোকেরা এটিকে একটি পুষ্টিকর খাবার হিসেবে মনে করে।
এর মাংসে প্রোটিন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকতে পারে।
২. শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি: ঐতিহ্যগতভাবে, শান্ডার মাংস শক্তিবর্ধক হিসেবে বিবেচিত হয়।
sanda khawar upokarita
কিছু অঞ্চলে মনে করা হয়, এটি খেলে শারীরিক দুর্বলতা দূর হয় এবং শক্তি বাড়ে।
৩. যৌন শক্তি বৃদ্ধি: সান্ডা তেলের সবচেয়ে প্রচলিত এবং বহুল আলোচিত ব্যবহার হলো যৌন শক্তি বৃদ্ধি।
লোকজ চিকিৎসায় এটি প্রাকৃতিক উত্তেজক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কিছু আঞ্চলিক বাজারে এই তেল বিক্রিও হয়।
৪. ত্বকের রোগ নিরাময়ে: কিছু ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাস অনুযায়ী,
গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খেলে আপনার যে ক্ষতি হবে
শান্ডার তেলের কাজ কি
সান্ডার তেল ত্বকের ক্ষত ও সংক্রমণ সারাতে সহায়ক হতে পারে।
৫. পেশীর ব্যথায় উপশম: পাকিস্তানে সান্ডার তেল পেশীর ব্যথানাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
তবে এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, যদিও লোকমুখে প্রচলিত আছে
এবং ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় এর ব্যবহার দেখা যায়, তবে এসব উপকারিতার বেশিরভাগেরই বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বা প্রামাণ্য গবেষণা দ্বারা সান্ডা তেল বা মাংসের উপকারিতা ও
নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। বরং, অজ্ঞাত উৎস থেকে তৈরি তেল শরীরের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংঘ (IUCN) এই প্রজাতিটিকে হুমকির মুখে
থাকা প্রজাতি হিসেবে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। সুতরাং, এর শিকার এবং ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তাই, মরুভূমির শান্ডা খাওয়া বা এর তেল ব্যবহারের আগে এর উপকারিতা ও ঝুঁকি সম্পর্কে
ভালোভাবে জেনে নেওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শান্ডা খাওয়া হালাল নাকি হারাম
ইসলামিক শরিয়াহ অনুযায়ী মরুভূমির শান্ডা (যদি সেটি ইউরোমাস্টিক্স প্রজাতির টিকটিকি বা ‘দব্ব’
হয়) খাওয়া হালাল নাকি হারাম, তা নিয়ে ইসলামী আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে:
অধিকাংশ আলেমের মত (শাফেয়ী, মালিকী ও হাম্বলী মাযহাব):
sanda khawa ki halal
* এই মাযহাবের আলেমগণ সান্ডা খাওয়া হালাল মনে করেন।
* তাঁদের প্রধান যুক্তি হলো, নবী করিম (সাঃ)-এর সামনে সাহাবীরা সান্ডা খেয়েছিলেন এবং তিনি তাঁদের নিষেধ করেননি।
একটি হাদিসে এসেছে যে, নবী (সাঃ) বলেছিলেন, “এটি আমার কওমের খাদ্য নয়, তাই আমি খাই না।
এর অর্থ হলো তিনি নিজে অপছন্দ করলেও এটিকে হারাম বলেননি।
হানাফি মাযহাবের মত:
* হানাফি মাযহাবের আলেমগণ সান্ডা খাওয়া মাকরূহ তাহরিমি বলেছেন।
এর অর্থ হলো এটি না খাওয়াই উত্তম এবং এটি হারামের কাছাকাছি।
* তাঁদের যুক্তি হলো, এটি একটি অরুচিকর প্রাণী যা সাধারণত মানুষ খেতে চায় না এবং কিছু
ফিকহবিদ এটিকে ‘খাবাইস’ (অপবিত্র) এর অন্তর্ভুক্ত মনে করেন।
সারসংক্ষেপ:
১/অধিকাংশ আলেমের মতে সান্ডা খাওয়া হালাল।
২/তবে হানাফি মাযহাবে এটি মাকরূহ তাহরিমি।
৩/যেহেতু এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে, তাই কেউ যদি এটিকে অপছন্দ করেন বা রুচিতে না ধরে,
শান্ডা খাওয়া জায়েজ কিনা
তবে তিনি এটি নাও খেতে পারেন। কিন্তু সাধারণভাবে এটিকে হারাম বলা যায় না।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সান্ডা বলতে অনেকে গুইসাপ জাতীয় প্রাণীও বুঝে থাকেন।
গুইসাপ খাওয়া হারাম কিনা, সে বিষয়ে আলেমদের আরও স্পষ্ট মতামত রয়েছে এবং সাধারণভাবে তা না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
তবে মরুভূমির ‘দব্ব’ বা ইউরোমাস্টিক্স টিকটিকির ক্ষেত্রে মতভেদটি বিদ্যমান।
Follow MY Facebook