গর্ভাবস্থায় মায়ের ঠান্ডা লাগলে কি বাচ্চার ঠান্ডা লাগে
গর্ভাবস্থায় ঠান্ডা লাগলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি,
কারণ এ সময় যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সাধারণ ঠান্ডা ঘরোয়া প্রতিকার এবং বিশ্রামেই সেরে যায়।
গর্ভাবস্থায় মায়ের ঠান্ডা লাগলে কি বাচ্চার ঠান্ডা লাগে
করণীয়:
১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম: ঠান্ডা লাগলে শরীরকে দ্রুত সুস্থ করে তোলার জন্য
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া খুবই জরুরি।শরীরকে অতিরিক্ত পরিশ্রম থেকে বিরত রাখুন।
২. প্রচুর তরল পান করুন: ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পরিমাণে জল, ফলের রস, স্যুপ, ডাবের জল পান করুন।
গরম স্যুপ যেমন চিকেন স্যুপ বা সবজির স্যুপ গলা ব্যথা এবং বন্ধ নাক খুলতে সাহায্য করে।
৩. গরম পানির ভাপ: গরম পানির ভাপ নিলে বন্ধ নাক খুলতে এবং শ্বাস নিতে সুবিধা হয়।
একটি পাত্রে গরম জল নিয়ে তার ভাপ নিন (মাথার উপর তোয়ালে দিয়ে ঢেকে নিতে পারেন)।
সতর্কতা: খুব বেশি গরম জলের ভাপ নিবেন না যাতে চামড়া পুড়ে না যায়।
এক মাসের বাচ্চা সর্দি হলে করনীয়
বাচ্চাদের সবুজ পায়খানা কিসের লক্ষণ
গর্ভাবস্থায় সাদা তিল খাওয়ার উপকারিতা
নবজাতক শিশুর ঘন ঘন বমি হলে কি করবেন
গর্ভাবস্থায় মায়ের ঠান্ডা লাগলে কি বাচ্চার ঠান্ডা লাগে
৪. গরম পানি দিয়ে গার্গল: হালকা গরম পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে গলা ব্যথা ও
খুসখুসে কাশি কমাতে সাহায্য করে। দিনে ২-৩ বার গার্গল করতে পারেন।
৫. মধু এবং লেবু: গরম জলে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে গলা ব্যথা এবং কাশি উপশম হয়।
মধু প্রাকৃতিক কাশি উপশমকারী হিসেবে কাজ করে।
৬. আদা ও রসুন: আদা চা পান করতে পারেন অথবা আদা কুচি ও রসুন খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
এগুলোতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিভাইরাল গুণাগুণ থাকে।
গর্ভাবস্থায় সর্দি হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয়
৭. নাকের ড্রপ: যদি নাক বন্ধ থাকে, তবে ০.৯% সোডিয়াম ক্লোরাইড (স্যালাইন) নাকের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।
কোনো ধরনের ডিকনজেস্ট্যান্ট নাকের ড্রপ ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৮. ভিটামিন সি: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি যেমন কমলা, লেবু, পেয়ারা,
আমলকী বেশি করে খান। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন:
যদিও বেশিরভাগ সাধারণ ঠান্ডা গুরুতর হয় না, তবে কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক:
১/ উচ্চ জ্বর: যদি আপনার জ্বর ১০০.৪°F (৩৮°C) বা তার বেশি হয়।
২/ শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা: শ্বাস নিতে কষ্ট হলে, শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হলে বা বুকে ব্যথা অনুভব করলে।
৩/ তীব্র গলা ব্যথা: যদি গলা ব্যথা খুব তীব্র হয় এবং গিলতে অসুবিধা হয়।
৪/ ১০ দিনের বেশি সময় ধরে লক্ষণ: যদি ঠান্ডার লক্ষণগুলো ১০ দিনের
গর্ভাবস্থায় কাশি হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয়
বেশি সময় ধরে থাকে বা খারাপের দিকে যায়।
৫/ কানের ব্যথা বা সাইনাসের চাপ: কানে ব্যথা হলে বা সাইনাসে তীব্র চাপ অনুভব করলে।
৬/ অতিরিক্ত কাশি: যদি কাশি খুব বেশি হয় এবং শ্বাস নিতে সমস্যা হয়।
গর্ভাবস্থায় ঠান্ডা পানি খেলে কি হয়
৭/ ফ্লুর লক্ষণ: যদি ফ্লুর মতো লক্ষণ যেমন শরীর ব্যথা, ক্লান্তি এবং তীব্র মাথা ব্যথা থাকে
ফ্লু গর্ভবতী মহিলাদের জন্য গুরুতর হতে পারে।
৮/ অন্যান্য অস্বাভাবিক উপসর্গ: যদি অন্য কোনো অস্বাভাবিক বা উদ্বেগজনক উপসর্গ দেখা দেয়।
যেসব ওষুধ এড়িয়ে চলবেন (চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া):
৯/ নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs) যেমন আইবুপ্রোফেন
(ibuprofen) বা অ্যাসপিরিন (aspirin)।
১০/ কিছু ডিকনজেস্ট্যান্ট, বিশেষ করে যেগুলোতে সিউডোএফেড্রিন
(pseudoephedrine) বা ফিনাইলফ্রিন (phenylephrine) থাকে।
১১/ কিছু অ্যান্টিহিস্টামিন, বিশেষ করে প্রথম ত্রৈমাসিকে।
১২/ যে কোনো নতুন ওষুধ বা হারবাল সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারের আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
যে কোন অসুস্থতা বা নতুন লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
গর্ভাবস্থায় ঠান্ডা লাগলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় মায়ের ঠান্ডা লাগলে সাধারণত বাচ্চার ঠান্ডা লাগে না। বাচ্চার ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা খুবই কম।
মা যখন ঠান্ডা বা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন, তখন ভাইরাস মায়ের রক্তে প্রবেশ করে না এবং
প্লাসেন্টা (গর্ভফুল) এর মাধ্যমে শিশুর কাছে পৌঁছাতে পারে না।
তবে কিছু বিষয় আছে যা মনে রাখা জরুরি:
জ্বর: যদি মায়ের ঠান্ডা লাগার সাথে উচ্চ মাত্রার জ্বর থাকে, তাহলে সেটি বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে উচ্চ জ্বর জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
তাই জ্বর হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় বুকে কফ জমলে করণীয়
ফ্লু (Influenza): সাধারণ ঠান্ডা (common cold) তেমন ক্ষতিকর না হলেও ফ্লু
(যা একটি ভিন্ন ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট) গর্ভবতী মায়ের জন্য এবং পরোক্ষভাবে বাচ্চার জন্য বেশি
বিপজ্জনক হতে পারে। ফ্লু হলে মায়ের গুরুতর জটিলতা যেমন নিউমোনিয়া
বা সময়ের আগে প্রসব হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
ফ্লুর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং ফ্লু ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত।
সাধারণ অসুস্থতা: মায়ের অসুস্থতা যদি খুব বেশি হয় এবং মা পর্যাপ্ত বিশ্রাম বা পুষ্টি না পান,
তবে পরোক্ষভাবে বাচ্চার উপর কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।
তবে এটি সরাসরি ঠান্ডা লাগার কারণে বাচ্চার ঠান্ডা লাগা নয়।
গর্ভাবস্থায় ঠান্ডা লাগলে করণীয়
কিছু টিপস:
১.যদি আপনার ঠান্ডা লাগে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
২.প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন।
৩.গলা ব্যথার জন্য লবণ পানি দিয়ে গার্গল করতে পারেন।
৪.নাক বন্ধ থাকলে লবণ জলের ড্রপ বা স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।
৫.যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সংক্ষেপে, গর্ভাবস্থায় মায়ের ঠান্ডা লাগলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চার ঠান্ডা লাগে না।
তবে যদি লক্ষণগুলো গুরুতর হয় বা জ্বর আসে, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।