হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান
পাক-নাপাকীর বিবরণ
যে নাপাক জিনিস কোন পাক জিনিস বা দেহের কোন স্থানে লাগলে ঐ
জিনিস বা স্থান ধৌত করার প্রয়োজন হয়,
তাকে নাজাসাত বা অপবিত্র জিনিস বলে, যথা : মল-মূত্র ইত্যাদি।
পবিত্রতা সম্পর্কে আলোচনা
নাজাসাত দু’প্রকার,যথা : হাকীকী ও হুকমী
নাজাসাতে হাকীকী: যে সকল নাপাকি চোখে দেখা যায়, তাকেই
নাজাসাতে হাকীকী বলে। যেমন, পেশাব, পায়খানা (দুধের শিশু হলেও), রক্ত, মদ ইত্যাদি।
নাজাসাত হুকমী: যে সকল নাজাসাত দেখা যায় না, তাকে নাজাসাতে
হুকমী বলে। যেমন,
মলদ্বার দিয়ে বায়ু নির্গত হওয়ায় অযূ ভঙ্গ হওয়া, গোসল
ফরয না হওয়া ইত্যাদি ।
নাজাসাতে হুকমী দু’ভাগে বিভক্ত। যথাঃ ১। হাদাছে আছগর ও ২।
হাদাছে আকবর ।
অযূ দ্বারা হাদাছে আছগার হতে পাক হতে হয়। আর গোসলের
দ্বারা হাদাছে আকবর হতে পাক হতে হয়।
নাজাসাতে হাকীকী দু’ভাগে বিভক্ত : যথাঃ নাজাসাতে গলীজা ও নাজাসাতে খফীফা
১। নাজাসাতে গলীজা (বেশি নাপাক) : যথা : মানুষের পেশাব পায়খানা, মানুষ ও সকল জীবজন্তুর প্রবাহিত রক্ত,
তথা সকল জীবজন্তুর মল ও সকল হারাম পশুর মূত্র নাজাসাতে গলীয়া।
পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম
হাঁস-মুরগীর মলও নাজাসাতে গলীযার অন্তর্ভুক্ত। নাজাসাতে গলীয়া যদি গাঢ় হয়, যেমন— পায়খানা, যদি ওজনে সাড়ে চার মাষা বা তার চেয়ে কম হয় তবে
না ধুয়ে নামায জায়েয। আর যদি তরল হয়; যেমন- পেশাব, তা হলে এক দেরহাম পর্যন্ত কাপড়ে বা শরীরে সমান বা তার চেয়ে কম স্থানে লাগলে মাফ।
অর্থাৎ ওযরবশতঃ উক্ত পরিমাণ নাজাসাত কাপড়ে বা দেহে থাকা অবস্থায় নামায আদায় করলে আদায় হবে বটে, কিন্তু মাকরূহ হবে
২। নাজাসাতে খফীফা (কম নাপাক) যথা- হালাল জীবের পেসার এবং
হারাম পাখীর পায়খানা।
হাঁস, মুরগী ও পানকৌড়ি ব্যতীত হালাল পাখীর
পায়খানা পাক। নাজাসাতে খফীফা পরিধানের কাপড় বা দেহের যে কোন স্থানের
চার ভাগের এক ভাগের কম স্থানে লাগলো যেমন, মাথা বা জামার আস্তিনের এক চতুর্থাংশের কম স্থানে লাগলে তা সহ নামায দুরুস্ত হবে। কিন্তু যদি পূর্ণ চতুর্থাংশে লাগে তবে তা না ধুয়ে নামায দুরুস্ত হবে না।
হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান
পবিত্রতা অর্জনের নিয়ম
নাজাসাতে হাকীকী হতে পবিত্রতা অর্জন করতে হলে পানি দিয়ে উত্তমরূপে ধৌত করতে হয়। কাপড় ধৌত করে তিনবার পানিতে ডুবিয়ে বা পানি ঢেলে প্রত্যেকবার নিংড়াতে হয় ।
ধাতু নির্মিত জিনিস যথা: আয়না, হাড়ের তৈরি জিনিস, চিনা মাটির বাসন ইত্যাদি মাটিতে ঘষলেই পবিত্র হয়। তবে লোহায় মরিচা থাকলে
অথবা উল্লিখিত সব রকম জিনিসে কারুকার্য খচিত থাকলে ঘষলে যদি নাপাকী দূর না হয় তবে তা ধৌত করে পবিত্র করতে হবে । এভাবে মাটির পাত্রও পবিত্র করা যায় ।
ইট বা পাথর দ্বারা নির্মিত পাকা স্থানে নাজাসাত লাগার পর যদি শুকিয়ে নাজাসাতের চিহ্ন (রং, গন্ধ বা স্বাদ) দূর হয়ে যায়, তবে তা পবিত্র বলে ধরা যাবে।
অবশ্য খোলা ইট পাথর এভাবে পবিত্র হয় না; বরং তা ধৌত করে পবিত্র করতে হয়।
নামাজ ভঙ্গের কারণ সমূহ বিস্তারিত
কাপড় পবিত্র করার পদ্ধতি
পাটি, চাটাই ইত্যাদি যে সকল জিনিস নিংড়ানো যায় না, তা একবার ভালভাবে ধুয়ে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। তারপর যখন পানির ফোঁটা পড়া বন্ধ হবে,
তখন আবার ধুয়ে ঝুলিয়ে রাখতে হবে । এরূপ তিনবার করলেই তা পবিত্র হয়ে যাবে। কিন্তু ধোয়ার সময় উত্তমরূপে রগড়িয়ে ধোয়া উচিত, যাতে শক্তি অনুযায়ী নাজাসাত দূর করার প্রচেষ্টায় ত্রুটি না হয় ।
অপবিত্র জিনিস পুড়ে ছাই হয়ে গেলে পবিত্র হয়ে যায়। যদি জমাট ঘৃতে ইঁদুর পড়ে মরে থাকে তবে ইঁদুর ও তৎপার্শ্ববর্তী কিছু ঘৃত ফেলে দেয়া হলে অবশিষ্ট ঘৃত পাক ।
যদি ঘৃত তরল হয়, তবে সমস্ত ঘৃতই অপবিত্র হয়ে যাবে । এ ঘৃত পবিত্র করতে হলে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে গরম করলে স্বাভাবিকভাবেই ঘৃত পানির উপর ভেসে উঠবে,
তখন চামচ বা অন্য কিছুর সাহায্যে ঘি উঠিয়ে নিবে। এভাবে তিনবার করলেই পবিত্র হবে। তৈলও এভাবেই পবিত্র করবে।
মাছ, মশা, ছারপোকা ও মাছির রক্ত অপবিত্র নয়। তা কাপড় বা অন্য বস্তুতে লাগলে অপবিত্র হবে না। তা ধুয়ে নামাযে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সূঁচের মাথা পরিমাণ পেশাবের ছিটা কাপড়ে পড়লে তা মাফ। কিন্তু এর চেয়ে বেশি পড়লে
কাপড় বা শরীর অপবিত্র হবে।
যে স্থান গোবর দিয়ে লেপা হয়, তা অপবিত্র হয়ে যায়। ঐ স্থানে কোন পাক বিছানা না বিছিয়ে
নামায পড়লে নামায জায়েয হবে না ।
হায়েয : প্রাপ্ত বয়স্ক স্ত্রীলোক অর্থাৎ যাহার বয়স ৯ বছর হতে ৫৫ বছর পর্যন্ত, তাদের রেহেম হতে বিনা যন্ত্রণায় জরায়ু দিয়ে যে রক্তপাত হয়,
তাকে হায়েয বলে । সুতরাং ৯ বছরের নিম্নে ও ৫৫ বা ৬০ বছরের উপরের বয়স্কা নারীর যদি রক্তপাত হয়, তবে তাকে এস্তেহাযা বলা হবে ।
হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান
হায়েযের সময়সীমা
হায়েযের মুদ্দত কমপক্ষে তিন দিন তিন রাত আর শেষ মুদ্দত দশ দিন দশ রাত । যেমন-
কোন স্ত্রীলোকের শুক্রবার সকাল ৭টায় রক্তপাত আরম্ভ হয়ে
যদি সোমবার ৭টার ১ মিনিট পূর্বে রক্ত বন্ধ হয়ে যায়, তবে তাকে হায়েয বলা যাবে না।
অর্থাৎ যে সময় রক্তপাত শুরু হয়েছে, তিন দিন তিন রাতের ঠিক সেই সময়ে রক্তপাত বন্ধ হলে হায়েয হিসাবে গণ্য হবে, তার কম হলে হবে না। তদ্রূপ দশ দিনের পর যে রক্তপাত হবে, একে এস্তেহাযা বলা হবে ।
হায়েযের রক্তঃ হায়েয অবস্থায় খাঁটি সাদা ব্যতীত লাল, কাল, জরদা, সবুজ ও মেটে এ কয়েকটি রংয়ের মধ্যে যে কোন একটি রংয়ের রক্ত আসুক প্রত্যেকটিই হায়েযের রক্ত বলে গণ্য হবে ।
হায়েয হতে পাক হওয়াকে ‘তোহর’ বা পবিত্রতা বলে। এ পবিত্রতারসর্বাপেক্ষা কম মুদ্দত ১৫ দিন। সর্বোচ্চ মুদ্দতের কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই।
কাজেই কোন স্ত্রীলোকের কোন কারণে হায়েয বন্ধ হবার পর যতদিন আবার রক্তপাত আরম্ভ না হবে ততদিনই পবিত্র থাকবে ।
কোন স্ত্রীলোকের যদি তিন দিন তিন রাত রক্তপাত হয়, তারপর ১৫ দিন পবিত্র থেকে
পুনরায় তিনদিন তিন রাত রক্তপাত হয়, তবে এ মধ্যবর্তী পনর দিন পবিত্রতার সময়।
আর পনর দিনের পূর্বের এবং পরের তিন দিন করে ছয় দিনই হায়েযের সময়। তবুও
হায়েযের মুদ্দতের ভেতর যদি দু’একদিন রক্ত দেখা না যায়,
ঐ সময় হায়েযের মধ্যে ধর্তব্য। যেমন, কোন মহিলার ছয় দিন হায়েয হওয়ার নিয়ম,
কিন্তু দু’দিন রক্তপাতের পর দু’দিন রক্ত বন্ধ থেকে আবার রক্তপাত হল; এখন এ মধ্যবর্তী রক্ত
বন্ধের দু’দিনও হায়েযের মধ্য গণ্য হবে।
হায়েযের সময় করণীয়: হায়েয চলাকালে নামায পড়া ও রোযা রাখা নিষেধ। পরে রোযার
কাযা করতে হয়, কিন্তু নামাযের কাযা করতে হয় না।
হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান
হায়েয অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত
হায়েয অবস্থায় মসজিদে যাওয়া, কা’বা শরীফ তাওয়াফ করা, কোরআন তেলাওয়াত ও
স্পর্শ করা হারাম। চুম্বন দেওয়া বা কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ
করা দুরস্ত আছে। তবে যাদের ধৈর্যচ্যুতির সম্ভাবনা আছে তাদের না করাই উত্তম । উক্ত হারাম
কাজকে যদি হালাল মনে করা হয়,
তবে ঈমান নষ্ট হবে। লোভে পড়ে বা অজ্ঞতাবশতঃ এরূপ করলে সর্বদা তওবা ইস্তেগফার করবে।
কাফ্ফারাস্বরূপ এক বা অর্ধ দিনার ছদ্কা দিবে । নেফাসঃ সন্তানের দেহের অর্ধেকের বেশি বের হলে যে রক্তপাত শুরু হয়
তখন থেকেই নেফাসের সময় শুরু হয়।যদি নেফাসের রক্ত চল্লিশ দিন পার হয়ে যায় এবং এ
সন্তানই উক্ত প্রসূতির প্রথম সন্তান হয়,
হায়েযের সময় কত দিন
তবে চল্লিশ দিন পর্যন্ত নেফাস পালন করবে। অবশিষ্ট কয়দিন এস্তেহাযা ধরতে হবে আর যদি
পূর্বে সন্তান জন্মে থাকে, তা হলে পূর্ব সন্তান প্রসবের পর
যে কয়দিন রক্তপাতের অভ্যাস ছিল, সে কয়দিন নেফাস ধরতে হবে, অবশিষ্ট দিন এস্তেহাযা বলে গণ্য হবে।
তবে চল্লিশ দিন অতিক্রম না করলে এস্তেহাযা হবে না । চল্লিশ দিনের দিন বন্ধ হলে এ চল্লিশ দিনই নেফাসের মধ্যে গণ্য হবে। এখন ধরে নিতে হবে যে,
তার পূর্বের অভ্যাস ভঙ্গ হয়ে গেছে। এরূপ রমণী চল্লিশ দিন পরে গোসল করে নামায পড়তে থাকবে, আর যে কয়দিন এস্তেহাযা গণ্য হবে, সে কয়দিনের
হায়েয অবস্থায় ইবাদত
নামাযের কাযা পড়বে । নেফাস অবস্থায় করণীয়: হায়েয অবস্থায় যেসব কাজ মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ, নেফাস অবস্থায়ও সেসব কাজ নিষিদ্ধ । নেফাসের রক্ত বন্ধ হওয়ার সাথে
সাথেই গোসল করা ফরয। সন্তান জন্মের পর রক্তপাত না হলেও গোসল ফরয হবে। সন্তানের অর্ধেক শরীর বের হওয়ার পূর্বে রক্তপাত হলে (যাকে এস্তেহাযা
বলা হয়, এ অবস্থায়) নামায না পড়লে গুনাগার হবে । হুঁশ থাকা অবস্থায় নামায ছাড়বে না। রুকূ-সেজদার ক্ষমতা যদি না থাকে শুধু মাথার ইশারায় হলেও
নামায আদায় করতে হবে। তবে সন্তান যদি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে
ত্যাগ করতে পারে । চল্লিশ দিন পার হোক আর না হোক, রক্ত বন্ধ হওয়ার সাথে
সাথে গোসল করে নামায পড়া শুরু করবে। গোসল করলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার
আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করে নামায পড়বে। হায়েযের ন্যায় নেফাসের সময়েও
নামাযের কাযা নেই। তবে রোযার কাযা করতে হবে। যদি ছয় মাসের ভেতর আগে পরে দু’ সন্তান হয়, তা হলে নেফাসের হিসেব প্রথম সন্তান হতে ধরা
যাবে। দ্বিতীয় সন্তান হতে ধরা যাবে না। এস্তেহাযা অবস্থায় করণীয় : এস্তেহাযার রক্তপাতে অযূ থাকে না সত্য,
কিন্তু গোসল করা ওয়াজিব হয় না। এস্তেহাযার সময় নামায ছাড়া দুরস্ত নেই। প্রত্যেক ওয়াক্তে মা’যূর হিসেবে অযূ করে নামায পড়বে।
আশা করি আপনি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়েছেন যদি আমাদের লেখায় কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর আপনাদের কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন ধন্যবাদ