কোরবানীর ফজিলত ও তাৎপর্য যা আমাদের জানা প্রয়োজন

কোরবানীর ফজিলত ও তাৎপর্য যা আমাদের জানা প্রয়োজন

কোরবানীর ফজিলত ও তাৎপর্য যা আমাদের জানা প্রয়োজন

কোরবানি কাদের উপর ওয়াজিব?

কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিম নর-নারীর উপর ওয়াজিব।

তবে, এই সামর্থ্যের কিছু সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি রয়েছে যা শরীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে।সেই বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো:

কোরবানীর ফজিলত ও ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী:

ইসলামী শরীয়তের মূলনীতি অনুসারে, নিম্নলিখিত শর্তাবলী পূরণ হলেই একজন মুসলিমের উপর কোরবানি ওয়াজিব হয়:

১. মুসলিম হওয়া: কোরবানি শুধু মুসলিমদের উপরই ওয়াজিব। অমুসলিমদের জন্য এই বিধান প্রযোজ্য নয়।

২. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া: সাবালক বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া কোরবানির জন্য একটি অপরিহার্য শর্ত। অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়।

তবে, তাদের অভিভাবকগণ তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি দিতে পারেন।

৩. জ্ঞানবান হওয়া: সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে। পাগল বা মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়।

৪. স্বাধীন হওয়া: কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য ব্যক্তিকে স্বাধীন হতে হবে, অর্থাৎ তিনি কারো দাস বা অধীনস্থ হতে পারবেন না।

বর্তমানে এই শর্তটি সাধারণভাবে প্রযোজ্য নয়, কারণ দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছে।

 

হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান

পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম কয়টি

তায়াম্মুমের পদ্ধতি

ওযুর ফরজ গোসলের ফরজ কয়টি

 

কোরবানীর ফজিলত ও তাৎপর্য যা আমাদের জানা প্রয়োজন

৫. মুকিম হওয়া: কোরবানির দিনগুলোতে (জিলহজের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ) ব্যক্তিকে নিজ স্থানে বসবাসকারী হতে হবে। মুসাফির (শরীয়তের দৃষ্টিতে ভ্রমণকারী)

ব্যক্তির উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। তবে, মুসাফির অবস্থায় কোরবানি করলে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবে।

কোরবানীর নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া

কোরবানির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া।

নিসাব হলো সেই পরিমাণ সম্পদ যা একজন ব্যক্তির অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন (যেমন: বাসস্থান, পরিধেয় বস্ত্র,

খাদ্য, চিকিৎসার খরচ ইত্যাদি) পূরণের পর অতিরিক্ত থাকে এবং যা যাকাতযোগ্য সম্পদের সর্বনিম্ন সীমা।

কোরবানীর ফজিলত ত্যাগের মহিমায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন

স্বর্ণের ক্ষেত্রে নিসাবের পরিমাণ হলো সাড়ে সাত ভরি (৮৭.৪৮ গ্রাম)।

* রূপার ক্ষেত্রে নিসাবের পরিমাণ হলো সাড়ে বায়ান্ন তোলা (৬১২.৩৬ গ্রাম)।

* টাকা-পয়সা, বাণিজ্যিক পণ্য বা অন্য কোনো সম্পদ যদি থাকে, তবে তার মূল্য নির্ধারণ করা হবে রূপার নিসাব অনুযায়ী।

কোরবানীর ফজিলত ত্যাগের মহিমায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন

অর্থাৎ, যদি কারো কাছে নগদ টাকা, ব্যবসায়িক পণ্য বা অন্য কোনো সম্পদ থাকে এবং তার মোট মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমান বা তার বেশি হয়, তবে তার উপর কোরবানি ওয়াজিব।

কোরবানীর ফজিলত ও তাৎপর্য যা আমাদের জানা প্রয়োজন

উল্লেখ্য:

* কোরবানির জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর ধরে থাকা জরুরি নয়। কোরবানির দিনগুলোতে কারো কাছে এই পরিমাণ সম্পদ থাকলেই তার উপর কোরবানি ওয়াজিব হবে।

* পরিবারের কোনো একজন সদস্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই কেবল তার উপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। পরিবারের অন্য সদস্যদের উপর তা বর্তাবে না, যদি না তাদেরও পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে।

সুতরাং, প্রত্যেক স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী এবং মুকিম মুসলিম নর-নারী, যাদের কাছে কোরবানির দিনগুলোতে তাদের অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন পূরণের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে, তাদের উপর কোরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালা সকল সামর্থ্যবান মুসলিমকে এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পালনের তাওফিক দান করুন।

Check Also

মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা কি জায়েজ

মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা কি জায়েজ

মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা কি জায়েজ? কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা ইসলামে পিতা-মাতার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *